Wednesday, May 24, 2017

শরণাগত ভক্তের রক্ষক

পৃথিবীর প্রায় বড় বড় শহরগুলিতে সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা অনেক বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। শত শত লোক নিহত হয়েছে। এইরকম বিপজ্জনক অবস্থায় কে আছেন যে রক্ষা করবেন?
একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণই এইরকম ভয়াবহ অবস্থায় রক্ষা করেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় তিনি আমাদের কাছে অর্জুনের মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, –
 
“ক্ষিপ্রং ভবতি ধর্মাত্মা শশ্বচ্ছান্তিং নিগচ্ছতি।
কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি।।” (গীতা, ৯/৩১)

 
তিনি শীঘ্রই ধর্মাত্মায় পরিণত হন এবং নিত্য শান্তি লাভ করেন। হে কৌন্তেয়! তুমি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা কর যে, আমার ভক্ত কখনও বিনষ্ট হন না।”
“হে ভগবান, যেহেতু আপনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, যিনি আপনার কাছে সুরক্ষা প্রার্থনা করেন, আপনি তাঁকে রক্ষা করেন। তাই আমরা আপনাদের কাছে আমাদের সুরক্ষা প্রার্থনা করি।”
এইভাবে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেমন করে আমাদের রক্ষক ও পালক। তাই যে কোনও অবস্থায়, তা যতই বিপজ্জনক হোক না কেন, কেবল ভগবান শ্রীকৃষ্ণই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু সবাই শ্রীকৃষ্ণের সুরক্ষা প্রাপ্ত হন কি? না, তবে যাঁর পূর্ণবিশ্বাস তথা শ্রদ্ধা আছে, তিনিই কেবল সুরক্ষা প্রাপ্ত হন।
যে ভক্ত পূর্ণ শরণাগত, তাঁর বিশ্বাস আছে যে কৃষ্ণ অবশ্যই তাঁকে রক্ষা করবেন – ‘অবশ্য রক্ষিবে কৃষ্ণ’, এবং পরিণামে তিনি কৃষ্ণের দ্বারা রক্ষিত হন। এই শরণাগতির নির্দিষ্ট কতকগুলি বিশেষ লক্ষণ আছে, –
“শরণাগতির ছয় প্রকার লক্ষণ – কৃষ্ণভক্তির অনুকূল যা গ্রহণ করা, কৃষ্ণভক্তির প্রতিকূল বিষয় বর্জন করা, কৃষ্ণ সবসময়ই রক্ষা করবেন এই বিশ্বাস, শ্রীকৃষ্ণকে প্রভুরূপে গ্রহণ করা, সর্বতোভাবে শরনাগত হওয়া এবং দৈণ্য।” (হরিভক্তিবিলাস, ১১/৪১৭)
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর ‘বিশ্বাস’ সম্বন্ধে তাঁর মত ব্যক্ত করে বলেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ রক্ষা করবেন যখন কেউ কাতর স্বরে বলেন, হে প্রভু, আমার এই দৃঢ়বিশ্বাস আছে যে, আপনি অবশ্যই আমাকে সর্বতোভাবে সর্বপ্রকার বিপদ ও দুর্বিপাক হতে রক্ষা করবেন।” এটাই শ্রদ্ধা তথা দৃঢ় বিশ্বাস। সাধু, শাস্ত্র, গুরু এবং কৃষ্ণের কথায় দৃঢ় বিশ্বাস ব্যতীত কেউ শরণাগত হতে পারে না।
অন্য একটি লক্ষণ হচ্ছে ‘আত্মনিক্ষেপ’। শরনাগত ভক্ত নিজের সুরক্ষা কামনায় হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে ক্রন্দন সহকারে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন। নাম-নামী অভিন হেতু কলিযুগে শরণাগতির অর্থ পবিত্র নামের শরনাগত হওয়া।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

অধিকন্তু, ভগবানের নাম স্বয়ং ভগবান অপেক্ষাও অধিক কৃপাময়। 
এই প্রসঙ্গে যামুনাচার্য একটি চমৎকার উপমা দিয়েছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করছেন যে, একজন মা রাগ করে তার স্তন্যপায়ী শিশুপুত্রটিকে যদি দূরে ঠেলে দেয়, তাহলে শিশুটি মায়ের আশ্রয় ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে কি? না, শিশুটি সম্পূর্ণভাবে তার মায়ের উপর নির্ভরশীল।
ঠিক তেমনই পূর্ণ শরণাগত ভক্ত একটি শিশুর মতো। শিশুটি যেমন তার মাকে ছেড়ে যেতে পারে না, তাতে তার মা তার উপর রাগ করুক আর স্নেহ করুক যাই করুক না কেন? তাই পূর্ণ নির্ভরশীল-সম্পন্ন ভক্তের মনোভাব এইভাবে বর্ণিত হয়েছে, “কৃষ্ণের ইচ্ছা যা আমি কেবল তাই করব এবং আমি আমার নিজ ইচ্ছানুসারে কিছু চিন্তা করব না।”
হরিবোল!

শাস্ত্র সিদ্ধান্ত

প্রশ্নঃ- কর্ম্ম কি?
উত্তর‍ঃ- শরীর,বাক্য ও মনের যে ক্রিয়া তাহাই কর্ম্ম ।
প্রশ্নঃ- কর্ম্ম কয় প্রকার?
উত্তরঃ- কর্ম্ম তিন প্রকার, যথাঃ- (১) সঞ্চিত কর্ম্ম (২) প্রারব্ধ কর্ম্ম (৩) ক্রিয়মাণ কর্ম্ম
প্রশ্নঃ- সঞ্চিত কর্ম্ম কি?
উত্তরঃ- অনেক অতীত জন্ম হইতে সঞ্চিত যে কর্ম্ম তাহাকেই সঞ্চিত কর্ম্ম বলে।
প্রশ্নঃ- প্রারব্ধ কর্ম্ম কি?
উত্তরঃ- অনেক সঞ্চিত কর্ম্মের পরিপক্ক এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাতে এই র্বত্তমান দেহের আরম্ভক যে কোন এক সঞ্চিত কর্ম্ম আছে তাহাই প্রারাব্ধ কর্ম্ম ।
প্রশ্নঃ- ক্রিয়মাণ কর্ম্ম
উত্তরঃ- জ্ঞাননোদয়ের পূর্বে ও পরে এই র্বত্তমান দেহে মরণ কাল র্পয্যন্ত যে কর্ম্ম তাহাকেই ক্রিয়মাণ কর্ম্ম বলে ।
এই কর্মই জীবের গতি নির্ণয় করে ।
কিভাবে নির্ণয় করে সেই প্রসঙ্গে আসি এইক্ষণে -------
এই সৃষ্টিজগৎ আপ্তকাম ব্রহ্মের লীলা (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৩)
জগৎকে সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মকেও জীবের কর্মের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়।
তদ্য ইহ রমণীয়চরণা অভ্যাশো হ যত্তে রমণীয়াং
যোনিমাপদ্যেরন্ব্রাহ্মণযোনিং বা ক্ষত্রিয়যোনিং বা বৈশ্যযোনিং
বাথ য ইহ কপূয়চরণা অভ্যাশো হ যত্তে কপূয়াং
যোনিমাপদ্যেরঞ্শ্বযোনিং বা সূকরযোনিং বা চণ্ডালযোনিং বা ॥ ছান্দোগ্য-৫.১০.৭॥
‘তাদের মধ্যে যারা (পূর্বজন্মে) রমণীয় আচরণ বা পুণ্যকর্ম করে তারা দেহান্তরে শীঘ্রই ব্রাহ্মণযোনিতে বা ক্ষত্রিয়যোনিতে বা বৈশ্যযোনিতে জন্মলাভ করে। আবার যারা (পূর্বজন্মে) কপূয়াচরণ অর্থাৎ কুৎসিত বা অশুভ কর্ম করে তাদের শীঘ্রই কুকুরযোনিতে বা শূকরযোনিতে বা চণ্ডালযোনিতে পুনর্জন্ম হয়।’- (ছান্দোগ্য-৫/১০/৭)।
একই বিষয়ে বৃহদারণ্যক উপনিষদেও বলা হয়েছে এভাবে-
‘…তিনি কর্মকেই আশ্রয় করে থাকেন। তাই পুণ্য কাজ করলে ভালো আর পাপ কাজ করলে মন্দ ভোগ করতে হয়। পাপ-পুণ্যের আবর্তে জীব-পুরুষকে জন্মচক্রে পাক খেতে হয়। তাই কর্ম হলো জীবের গতি, কর্ম হলো জীবের মুক্তি। কর্মই স্থির করে দেবে জীব-পুরুষের অবস্থান।’- (বৃহদারণ্যক-৩/২/১৩)।
অর্থাৎ পূর্বজন্মের কর্মফলই নির্ধারণ করে দিচ্ছে এজন্মে কিভাবে এই ফল ভোগ করতে হবে, এই জন্মে সুখ ভোগ করবে, না কি দুঃখ ভোগ করবে। তৎকালীন সামাজিক ব্যবস্থা- শোষক-শোষিত, প্রভু-ভৃত্য প্রথার- দৃঢ় সমর্থক বাদরায়ণও একে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বলেছেন-
(বৈষম্যনৈর্ঘৃণ্যে ন, সাপেক্ষত্বাৎ, তথা হি দর্শয়তি), ‘জগতে সুখ দুঃখাদি দেখে ব্রহ্মকে পক্ষপাতযুক্ত বা নিষ্ঠুর বলা যায় না- কারণ শাস্ত্রে এই বৈষম্যের হেতু এবং ব্রহ্মের স্বরূপ প্রদর্শিত হয়েছে।’- (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৪)।
এবং জীবের এই কর্মফল দাতা যে ঈশ্বরই, তা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করেই তিনি বলেন-
‘ফলমতঃ, উপপত্তেঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/৩৮)।।
ভাবার্থ : জীবের কর্মফলদাতা যে ঈশ্বর তাই যুক্তিসিদ্ধ সিদ্ধান্ত (ব্রঃ-৩/২/২৮)।
এখানে হয়তো একটি আপত্তি উঠতে পারে যে, কর্ম তো একটা সময়ে করা হয়ে থাকে, তার আবার আগের জগতের কথা কী করে আসে ? কিংবা প্রশ্নটি এভাবেও হতে পারে যে, যেহেতু প্রথম সৃষ্টির পূর্বে জীবাত্মার পক্ষে তার পূর্বে কোন অবস্থান সম্ভব নয়, তাই কর্মফল থাকাও সম্ভব নয়, তাহলে প্রথম সৃষ্টির সময়েই জীবের মধ্যে অবস্থার পার্থক্য আসবে কোত্থেকে- যদি না ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করে এই ভেদ সৃষ্টি করে থাকেন ? এই আপত্তির উত্তরে বাদরায়ণ বলেন যে, সৃষ্টি অনাদি, অতএব কর্মও অনাদি-
(ন কর্মাবিভাগাদিতি চেৎ, ন, অনাদিত্বাৎ), ‘সৃষ্টির পূর্বে জীব ও ব্রহ্মের কোন ভেদ ছিলো না। সৃষ্টির সময়েই ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করে ভেদ সৃষ্টি করেছেন যদি এরূপ বলা হয়, তাহলে এর উত্তরে বলা যায় যে, না জীবজগৎও অনাদি।’- (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৫)।
পুনর্জন্মের বিষয়ে বাদরায়ণ উপনিষদের সিদ্ধান্তকে সু-ব্যবস্থিতরূপে একত্রিত করেছেন। ছান্দোগ্য উপনিষদের (ছাঃ-৫/১০/৭) শ্রুতিতে সুকৃতি-দুষ্কৃতির মাধ্যমে পুনর্জন্মের যে ধারণা অভিপ্রেত হয়েছে, তার থেকেই পরবর্তী উপনিষদগুলিতে জীবের পুনর্জন্মচক্রের একটা দার্শনিক রূপরেখাও তৈরি হয়ে গেছে। যেমন, প্রশ্ন-উপনিষদে বলা হয়েছে-
‘তেজো হ বা উদানঃ তস্মাৎ উপশানততেজাঃ। পুনর্ভবম্ ইন্দ্রিয়ৈঃ মনসি সম্পদ্যমানৈঃ’। (প্রশ্নোপনিষদ-৩/৯)।। ‘যৎ চিত্তন্তেনঃ এষঃ প্রাণম্ আয়াতি। প্রাণঃ তেজসা যুক্তঃ সহাত্মনা যথাসঙ্কল্পিতং লোকং নয়তি’। (প্রশ্নোপনিষদ-৩/১০)।।
অর্থাৎ :অগ্নিই উদান। মানুষের যখন মৃত্যু হয় তখন তার শরীর শীতল হয়ে যায়। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন মনে লীন হয় এবং সে জন্মান্তরের জন্য প্রস্তুত হয় (প্রশ্ন-৩/৯)। মৃত্যুকালে জীবাত্মা প্রাণে প্রবেশ করে। সঙ্গে থাকে মন এবং সেই সময়কার মনের যত সংস্কার বা চিন্তা ও বাসনা সমূহ। প্রাণ তখন অগ্নি অর্থাৎ উদানের সঙ্গে যুক্ত হয় (কেননা উদানই তাকে দেহের বাইরে নিয়ে যায়)। আত্মা যে লোক কামনা করে প্রাণ তাকে সেই লোকেই নিয়ে যায়। তারপরে আত্মা নতুন জন্ম গ্রহণ করে (প্রশ্ন-৩/১০)।
এই ধারণারই আরেকটু বিস্তৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বৃহদারণ্যক উপনিষদে-
‘স যত্র অয়মাত্মাহ্বল্যং ন্যেত্য সংমোহমিব ন্যেতি অথৈনমেতে প্রাণা অভিসমায়ন্তি স এতাস্তেজোমাত্রাঃ সমভ্যাদদানো হৃদয়মেব অন্ববক্রামতি ষ যত্রৈষ চাক্ষুষঃ পুরুষঃ পরাঙ্ পর্যাবর্ততে, অথ অরূপজ্ঞ ভবতি’। (বৃহদারণ্যক-৪/৪/১)।। ‘একীভবতি ন পশ্যতীতি আহুঃ, একীভবতি ন জিয়তীতি আহুঃ, একীভবতি ন রসয়ত ইতি আহুঃ, একীভবতি ন বদতীতি আহুঃ, একীভবতি ন শৃণোতীতি আহুঃ, একীভবতি ন মনুতে ইত্যাহুঃ, একীভবতি ন স্পৃশতীতি আহুঃ একীভবতি ন বিজানাতীত্যাহুঃ। তস্য হি এতস্য হৃদয়স্যাগ্রং প্রদ্যোততে, তেন প্রদ্যোতেন এষ আত্মা নিষ্ক্রামতি চক্ষুষ্টো বা মূর্ধ্নো বা অন্যেভ্যো বা শরীরদেশেভ্যঃ। তং উৎক্রমন্তং প্রাণোহনুৎক্রামতি, প্রাণমনুৎক্রামন্তং সর্বে প্রাণা অনুৎক্রামন্তি, সবিজ্ঞানো ভবতি, সবিজ্ঞানমেব অন্ববক্রামতি। তং বিদ্যাকর্মণী সমন্বারভেতে পূর্বপ্রজ্ঞা চ’। (বৃহদারণ্যক-৪/৪/২)।। তদ্ যথা তৃণজলায়ুকা তৃণস্যান্তং গত্বাহন্যমাক্রমম্ আক্রম্যাত্মানম্ উপসংহরত্যেবং এবায়মাত্মা ইদং শরীরং নিহত্যাহবিদ্যাং গময়িত্বাহন্যমাক্রমং আক্রম্যাত্মানং উপসংহরতি’। (বৃহদারণ্যক-৪/৪/৩)।।
অর্থাৎ :এই শারীর-পুরষ আত্মা দুর্বলতার কারণে যখন সংজ্ঞালোপ পাবার মতো অবস্থায় আসে তখন সবকটি প্রাণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয় এসে জড়ো হয় আত্মার কাছে। যে তেজশক্তি নিয়ে ইন্দ্রিয়রা ছিলো প্রকাশমান, করছিলো আপন-আপন নির্দিষ্ট কাজ, তাদের সেই তেজকে নিয়ে প্রবেশ করে হৃদয়ে। সঙ্গত কারণেই চাক্ষুষ-পুরুষ আদিত্যের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে, চোখ আর কেমন করে রূপ দেখবে ? তাই মুমূর্ষুর চোখে কোন রূপই ধরা পড়ে না (বৃঃ-৪/৪/১)। আত্মার সঙ্গে এক হয়ে মিশে গেলে, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকলে কি আর স্বাতন্ত্র্য থাকে ? একীভূত হয়ে থাকার ফলে, লোকে বলে শুনতে, চিন্তা করতে, স্পর্শ করতে পারছে না, কিছু জানতেও পারছে না। সেই সময় তার হৃদয়ের অগ্রভাব দীপ্তিযুক্ত হয়ে ওঠে, প্রকাশিত হয় হৃদয়পথে নির্গমন দ্বার। দেহকে ছেড়ে জ্যোতির সাহায্যে সেই আত্মা জীবের কামনা অনুযায়ী অনুরূপ পথ দিয়ে বেরিয়ে যান। যদি তার সাধনা থাকে আদিত্যলোকের তবে আত্মা নিষ্ক্রান্ত হন চক্ষুপথে, ব্রহ্মলোকের জন্য ব্রহ্মতালু পথে, আবার নানা-বাসনা, নানা কর্মানুসারে অনুরূপ অপরাপর ইন্দ্রিয়পথে। আত্মা নির্গত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যপ্রাণ তাঁর অনুগমন করে, সেই সঙ্গে অপরাপর প্রাণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ও তাঁর অনুগমন করে। আত্মা তখন বিজ্ঞানময়। এই বিজ্ঞানময় আত্মার অনুগমন করে বিদ্যা, কর্ম আর সংস্কার (বৃঃ-৪/৪/২)। জলায়ুক বা জলৌকা অর্থাৎ জোঁক যেমন ঘাসের এক ডগা ছেড়ে আর এক ডগায় গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নেয়, আত্মাও তেমনি দেহত্যাগের পর অবিদ্যা দূর করে, স্থূল শরীরটাকে পরিত্যাগ করে আশ্রয়রূপ অন্য দেহকে অবলম্বন করে (বৃহদারণ্যক-৪/৪/৩)।
এই শ্রুতিকেই প্রামাণ্য স্বীকার করে তাই বাদরায়ণও বলেন-
‘তদন্তরপ্রতিপত্তৌ রংহতি সম্পরিষ্বক্তঃ, প্রশ্ননিরূপণাভ্যাম্’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১)।।
‘প্রাণগতেশ্চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/৩)।।
অর্থাৎ :জীব সূক্ষ্মভূত-সমন্বিত হয়ে দেহত্যাগান্তে অন্যদেহ প্রাপ্তির জন্য গমন করে- তা শ্রুতি বর্ণিত প্রশ্নোত্তর থেকে অবগত হওয়া যায় (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১)। বৃহদারণ্যক শ্রুতি বলেন যে, জীব উৎক্রান্ত হলে জীবের সাথে ইন্দ্রিয়সকলও গমন করে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/৩)।
এই প্রাণসকল বা সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয়সহ উৎক্রান্ত জীব কোথায় গমন করে ? এর একটা বিবরণ ছান্দোগ্য উপনিষদেই পাওয়া যায়। যেমন-
‘স জাতো যাবৎ-আয়ুষম্ জীবতি তং প্রেতং দিষ্টমিতম্ অগ্নয়ঃ এব হরন্তি যত এবেতো যতঃ সম্ভূতো ভবতি’। (ছান্দোগ্য-৫/৯/২)।। ‘তদ্ য ইত্থং বিদুর্যে চ ইমে অরণ্যে শ্রদ্ধা তপ ইত্যুপাসতে তে অর্চিষম্ অভিসংভবন্তি অর্চিষঃ অহঃ অহ্নঃ আপূর্যমাণপক্ষম্ আপূর্যমাণপক্ষাদ্ যান্ ষট্ উদঙ্ এতি মাসাংস্তান্’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/১)।। ‘মাসেভ্যঃ সংবৎসরং সংবৎসরাৎ আদিত্যম্ আদিত্যাৎ চন্দ্রমসং চন্দ্রমসো বিদ্যুতং তৎ পুরুষঃ অমানবঃ স এনান্ ব্রহ্ম গময়তি এষঃ দেবযানঃ পন্থাঃ ইতি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/২)।। ‘অথ য ইমে গ্রাম ইষ্টাপূর্তে দত্তম্ ইতি উপাসতে তে ধূমম্ অভিসম্ভবন্তি ধূমাৎ রাত্রিম্ রাত্রেঃ অপরপক্ষম্ অপরপক্ষাৎ যান্ ষট্ দক্ষিণা এতি মাসাংস্তান্নৈতে সংবৎসরম্ ন অভি প্রাপ্নুবন্তি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৩)।। ‘মাসেভ্যঃ পিতৃলোকং পিতৃলোকাৎ আকাশম্ আকাশাৎ চন্দ্রমসম্ এষঃ সোমো রাজা তৎ দেবানাম্ অন্নম্ তং দেবা ভক্ষয়ন্তি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৪)।। ‘তস্মিন্ যাবৎ সম্পাতম্ উষিত্বা অথ এতম্ অধ্বানম্ এব পুনঃ নিবর্তন্তে যথা ইতম্ আকাশম্ আকাশাৎ বায়ুম্ বায়ুঃ ভূত্বা ধূমঃ ভবতি ধূমঃ ভূত্বা অভ্রং ভবতি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৫)।।
অর্থাৎ :(সন্তান) জন্মগ্রহণ করে যতদিন তার আয়ু ততদিন জীবিত থাকে। (তারপর যখন) যথানির্দিষ্ট রূপে (অর্থাৎ কর্মফল অনুযায়ী লোক লাভের জন্য) দেহত্যাগ করে, তখন (তার পুত্র ও শিষ্যরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য) তাকে ঘর থেকে সেই অগ্নিতে নিয়ে যায়- যে অগ্নি থেকে সে এসেছে, যে অগ্নি থেকে সে উৎপন্ন হয়েছে (ছাঃ-৫/৯/২)। যাঁরা পঞ্চাগ্নিবিদ্যা জানেন এবং যাঁরা অরণ্যে বাস করে শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে তপস্যাদি করেন, তাঁরা মৃত্যুর পর অর্চিলোক অর্থাৎ জ্যোতির্লোক প্রাপ্ত হন। (অতঃপর) অর্চি থেকে দিনে, দিন থেকে শুক্লপক্ষে, শুক্লপক্ষ থেকে উত্তরায়ণের ছয় মাসে- (ছাঃ-৫/১০/১)। সেখান থেকে সংবৎসরে, সংবৎসর থেকে আদিত্যে, আদিত্য থেকে চন্দ্রলোকে এবং চন্দ্রলোক থেকে বিদ্যুৎ-লোক প্রাপ্ত হন। সেই স্থানে (ব্রহ্মলোক থেকে) এক অমানব অর্থাৎ জ্যোতির্ময় পুরুষ এসে তাদের ব্রহ্মলোকে নিয়ে যায়। এই পথই দেবযান অর্থাৎ দেবলোকের পথ (ছাঃ-৫/১০/২)। আর যে সকল গৃহস্থ যজ্ঞ, সমাজসেবামূলক কর্ম এবং দান ইত্যাদি অনুষ্ঠান করেন তাঁরা (মৃত্যুর পর) ধূমকে প্রাপ্ত হন। (তারপর তাঁরা) ধূম থেকে রাত্রি, রাত্রি থেকে কৃষ্ণপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ থেকে দক্ষিণায়ণের ছয়মাসে গমন করেন। এঁরা (দেবযানপথে গমনকারীদের মতো) সংবৎসরকে প্রাপ্ত হন না (ছাঃ-৫/১০/৩)। দক্ষিণায়ণের ছয়মাস থেকে পিতৃলোকে, পিতৃলোক থেকে আকাশে, আকাশ থেকে চন্দ্রলোকে গমন করেন। ইনিই (অর্থাৎ উজ্জ্বল চন্দ্রই) রাজা সোম। ইনি দেবতাদের অন্ন, দেবতারা এঁকে ভোগ করেন (ছাঃ-৫/১০/৪)। কর্মফল ক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত চন্দ্রলোকে বাস করে তারপর যে পথে তাঁরা গিয়েছিলেন সেই পথেই পুনরায় (পৃথিবীতে) ফিরে আসেন। তাঁরা প্রথমে আকাশ ও পরে বায়ুকে প্রাপ্ত হন। বায়ু হয়ে ধূম, ধূম হয়ে কুয়াশা হন (ছান্দোগ্য-৫/১০/৫)।
শ্রুতিতে এই যে জীবের উৎক্রমণের পর আবার কর্মফল ভোগের জন্য পৃথিবীতে অবতরণ প্রক্রিয়া বর্ণিত হয়, তাই বাদরায়ণও বলেন-
‘কৃতাত্যয়ে অনুশয়বান্, দৃষ্টস্মৃতিভ্যাম্ যথেতমনেবং চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/৮)।।
ভাবার্থ : শ্রুতি-স্মৃতি থেকে জানা যায় যে, জীব যে-পথে চন্দ্রলোকে গিয়েছিলো, কর্মফল ভোগের পর আবার সেই পথেই এবং অন্যভাবেও ভুক্তাবশিষ্ট কর্মসহ পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে (ব্রঃ-৩/১/৮)।
কিন্তু এখানে প্রশ্ন আসে যে, এ সকল ব্যক্তির আত্মা কি বাস্তবিকপক্ষে আকাশ, ধূম ইত্যাদির সঙ্গে অভিন্ন হয়ে যায়, অথবা এরা কি একটি প্রকৃতিগত সাদৃশ্য প্রাপ্ত হয় ? বিষয়টি স্পষ্ট করতে সূত্রকার বাদরায়ণ বলেন-
‘তৎসাভাব্যাপত্তিঃ, উপপত্তেঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২২)।।
ভাবার্থ : চন্দ্রমণ্ডল হতে অবতরণকালে জীব আকাশাদির সদৃশ হয়। আকাশস্বরূপ হয় না- কারণ সদৃশ হওয়াই যুক্তিসঙ্গত (ব্রঃ-৩/১/২২)।
অর্থাৎ, শ্রুতিটিতে আকাশ ইত্যাদির সাথে অভিন্নত্বের কথা বলা হয়নি। শ্রুতিটির অর্থ হলো, এরা আকাশ ইত্যাদির প্রকৃতিগত একটি সাদৃশ্য প্রাপ্ত হয়- আকাশ, বায়ু প্রভৃতির মতো হয়ে যায়। তার মানে, জীব আকাশের মতো একটি সূক্ষ্ম আকার ধারণ করে বায়ুর অধীনে আসে এবং ধূম ইত্যাদির সাথে সংযুক্ত হয়। এই পুনর্জন্ম প্রক্রিয়ায় তারপরে ছান্দোগ্য উপনিষদে আরো বলা হয়েছে-
‘অভ্রং ভূত্বা মেঘো ভবতি মেঘো ভূত্বা প্রবর্ষতি ত ইহ ব্রীহি-যবাঃ ওষধি-বনস্পতয়ঃ তিলমাষাঃ ইতি জায়ন্তে অতঃ বৈ খলু দুর্নিষ্প্রপতরং যঃ যঃ হি অন্নম্ অত্তি যঃ রেতঃ সিঞ্চতি তৎ ভূয়ঃ এব ভবতি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৬)।।
অর্থাৎ :কুয়াশা হয়ে মেঘ হন, মেঘ হয়ে বর্ষণ করেন। তারপর জীবগণ এই পৃথিবীতে ব্রীহি, যব, ওষধি, বনস্পতি, তিল ও মাষ ইত্যাদি রূপে জাত হন। এই শষ্যাদি থেকে নিষ্ক্রমণ দুঃসাধ্য। (সন্তান উৎপাদনে সমর্থ) যে যে প্রাণী ওই (ব্রীহি প্রভৃতি) অন্ন আহার করে এবং সন্তান উৎপন্ন করে, সেই সেই প্রাণিরূপে জীবগণ পুনরায় জন্মগ্রহণ করে (ছান্দোগ্য-৫/১০/৬)।
এখানে একটি প্রশ্ন উঠে যে, চন্দ্রলোক হতে প্রত্যাবর্তনকারী জীবাত্মা যখন আকাশ, বায়ু প্রভৃতির সাথে সাদৃশ্যপ্রাপ্ত হয় তখন কি তা বেশ দীর্ঘকালই ঐ অবস্থায় থাকে, না কি শীঘ্রই এক অবস্থা হতে অবস্থান্তর প্রাপ্ত হয় ? এবং অন্য প্রশ্নটি হলো, জীবাত্মা কি ব্রীহি ইত্যাদি উদ্ভিজ্জরূপে জাত হয় ? এ প্রেক্ষিতে বাদরায়ণ বলেন-
‘নাতিচিরেণ, বিশেষাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৩)।।
‘অন্যাধিষ্ঠিতে পূর্ববৎ, অভিলাপাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৪)।।
‘রেতঃ-সিক্-যোগঃ অথ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৬)।।
‘যোনেঃ শরীরম্’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৭)।।
ভাবার্থ :শ্রুতি বলেন জীবের চন্দ্রলোক হতে নানা অবস্থার (ব্রীহি, যব ইত্যাদি) মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আসতে বেশি বিলম্ব হয় না। এ বিষয়ে বিশেষ শ্রুতি তাই বলেন (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৩)। জীব ব্রীহি ইত্যাদি রূপ প্রাপ্ত হয় বলা হয়েছে; তার অর্থ হলো সেই সেই ব্রীহিতে অবস্থান হয় মাত্র, কারণ শ্রুতিতে এ প্রসঙ্গে আকাশাদি সম্বন্ধে যেরূপ উল্লেখ আছে, ব্রীহির সম্বন্ধেও সেরূপই উল্লেখ আছে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৪)। চন্দ্রলোক-প্রত্যাগত জীব ধান ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার পর যারা শুক্রনিষেক করে জন্মদান করতে সমর্থ তাদের দেহে প্রবিষ্ট হয় (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৬)। যোনিকে (গর্ভকে) আশ্রয় করেই জীব স্বীয় ভোগায়তনদেহ লাভ করে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৭)।।
অতএব, সংক্ষিপ্ত করে বললে, দেহত্যাগান্তে পরলোক ভ্রমণ করে প্রত্যাগত জীব কর্মফল অনুযায়ী ইহলোকে পুনরায় জীবন শুরু করে। পুণ্যবানগণ চন্দ্রলোকে যান। নবকলেবর ধারণের জন্য চন্দ্রমা থেকে মেঘ, জল, অন্নাদির যে রাস্তার কথা উপনিষদে বলা হয়েছে তাতে ফিরে আসতে দেরি হয় না। যে ধান্যশস্যাদির সঙ্গে জীব মাতৃগর্ভে প্রবিষ্ট তাতে সে নিজে নয়, অন্যজীবের অধিষ্ঠাতা হওয়ার সময় এরূপ করে। সুতরাং অবতরণকারী জীবাত্মা অন্য জীবাত্মার দ্বারা (সঞ্জীবিত) প্রাণবন্ত বৃক্ষাদির মধ্যে অবস্থান মাত্র করে- যে পর্যন্ত না নতুন কোন জন্মের সুযোগ পায়। সেই শস্য ভক্ষণের পর আবার রক্ত-বীর্য-যোনির সংযোগ হয়, যার ফলে হয় নতুন শরীর সৃষ্টি। অর্থাৎ পরিশেষে জীবাত্মা একজন সন্তান-উৎপাদনসক্ষম (রেতঃসিঞ্চনকারী) পুরুষের সংস্পর্শে এসে নারীর গর্ভে প্রবেশ করে এবং সেখানে একটি নতুন দেহ লাভ করে, যে দেহ (ছান্দোগ্য-৫/১০/৭ অনুযায়ী) পূর্ব-কৃত-কর্মের ভুক্তাবশিষ্ট ফল ভোগ করার জন্য সমর্থ।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন উঠে যে, ইহলোক থেকে যারা উৎক্রমণ করে তাদের সকলেই কি চন্দ্রলোকে গমন করে থাকে ? যে-সকল জীবের কর্মফল চন্দ্রলোক গমনের পক্ষে যথেষ্ট নয়, অর্থাৎ যারা যজ্ঞাদি বা কোন ধর্মানুষ্ঠান করে না, কিংবা অনিষ্টকারী ব্যক্তি, মৃত্যুর পর তাদের কী গতি হয় ? এ বিষয়ে ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে-
‘অথ এতয়োঃ পথোর্ন কতরেণচন তানীমানি ক্ষুদ্রাণি অসকৃৎ আবর্তীনি ভূতানি ভবন্তি জায়স্ব ম্রিয়স্ব ইতি এতৎ তৃতীয়ং স্থানম্ তেন অসৌ লোকঃ ন সম্পূর্যতে তস্মাৎ জুগুপ্সেত’।। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৮)।।
অর্থাৎ :যারা (অর্থাৎ যে জীবগণ উপাসনা বা ইষ্টপূর্তাদি কর্ম করে না) উভয় পথের কোন পথ দিয়েই যায় না, তারা পুনঃ পুনঃ (জন্ম-মৃত্যু চক্রে) আবর্তনশীল ক্ষুদ্র প্রাণিরূপে জন্মগ্রহণ করে। (এদের বিষয়ে বলা যায়)- জন্মাও আর মরো (অর্থাৎ এরা এতো ক্ষণস্থায়ী যে জন্মগ্রহণ করেই মরে যায়। জন্ম-মৃত্যু ছাড়া এদের জীবনে অন্য কোন ঘটনা নেই)। এই হলো তৃতীয় স্থান। এজন্যেই এই লোক (অর্থাৎ স্বর্গ বা চন্দ্রলোক) পূর্ণ হয় না। সুতরাং (এই গতিলাভকে) ঘৃণা করবে (ছান্দোগ্য-৫/১০/৮)।
অর্থাৎ অনিষ্টকারী ব্যক্তি স্বর্গে গমন করে না। তাহলে কোথায় যায় ? সংশয় দূর করতে বাদরায়ণ বলেন-
‘সংযমনে তু অনুভূয় ইতরেষাম্ আরোহাবরোহৌ, তদ্গতিদর্শনাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৩)।।
ভাবার্থ : অনিষ্টকারী ব্যক্তি যমলোকে গমন করে; কারণ অনিষ্টকারীর সংযমী নামক যমপুরে যাওয়ার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে (ব্রঃ-৩/১/১৩)।
কারণ, কঠ উপনিষদে বলা হয়েছে-
‘ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বালং প্রমাদ্যন্তং বিত্তমোহেন মূঢ়ম্ ।
অয়ং লোকো নাস্তি পর ইতি মানী পুনঃ পুনর্বশম্ আপদ্যতে মে’।। (কঠোপনিষদ-১/২/৬)।।
অর্থাৎ :যম বলছেন, সংসারী মানুষ মাত্রই নিজ নিজ পরিবারের প্রতি অতিশয় আসক্ত। ধন-সম্পদের মোহ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাদের বুদ্ধি অপরিণত। তারা তাদের চারপাশের জগৎকেই একমাত্র সত্য বলে মনে করে। এর বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, সে খোঁজ রাখে না। ইহলোকই আছে, পরলোক বলে কিছু নেই- যে-ব্যক্তি এ কথা মনে করে সে বারবার আমার অধীন হয়। অর্থাৎ তার পুনঃ পুনঃ জন্মমৃত্যু ঘটে থাকে (কঠ-১/২/৬)।
চন্দ্রলোকে আরোহণ শুধুমাত্র শুভকর্মের ফল ভোগেরই জন্য- অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। সুতরাং অনিষ্টকারিরা চন্দ্রলোকে যায় না। তাদের গন্তব্য হয় নরকে। কৃতকর্মের কষ্টভোগের মাধ্যমে পাপমুক্ত হয়ে পূর্ব-কৃত-কর্মের ভুক্তাবশিষ্ট ফল ভোগ করার জন্য পুনরায় জন্মগ্রহণ করে জীব দেহধারী হয়। তাই বাদরায়ণ বলেন-
‘স্মরন্তি চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৪)।।
‘অপি চ সপ্ত’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৫)।।
‘বিদ্যাকর্মণোঃ ইতি তু প্রকৃতত্বাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৭)।।
ভাবার্থ :
স্মৃতিশাস্ত্রেও (যথা মনুস্মৃতি) পাপীদের নরক গমনের কথা দৃষ্ট হয় (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৪)। অধিকন্তু পাপীদের ভোগের জন্য সাতটি নরক আছে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৫)। পাপীদের চন্দ্রলোকে গমন হয় না, কারণ, বিদ্যাদ্বারা দেবযান এবং কর্মের দ্বারা পিতৃযান প্রাপ্তির কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৭)।
অতএব সৎ কর্ম করুন । যে যে কর্মের অধিকারী সেই কর্ম করে পরজন্মে সৎগতি লাভ করুন । এক জন্মে সকল পাপ দূরীভূত হয় না । এই জন্মে আমি শুদ্র আমার সৎ কর্ম আমাকে পূনজন্মে ব্রাহ্মণ হতে সাহায্য করবে । এই হল শাস্ত্র সিদ্ধান্ত ।
ওমঁ শান্তি শান্তি শান্তি ।।

Saturday, March 11, 2017

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু –করুণার অবতার

গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে মহাপ্রভুর লীলার বিশেষ পোষ্ট

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিশেষত কলির দুঃখ-দুর্দশাগ্র



শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু –করুণার অবতার
­স্ত জীবদের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত সংকীর্তন আন্দোলন এখনও বিশাল নদীর মতো সারা বিশ্ব প্লাবিত করছে। আর আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON)মহাপ্রভু সেই করুণামৃত বন্যার জল সারা পৃ্থিবীতে বহন করেছে। বিভিন্ন যুগে আত্মাতত্ত্ব ঊপলব্ধির জন্যকতই না কঠোর তপশ্চর্যা ও ব্রতোপবাসাদির বিধান ছিল। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এমন সরল পন্থা প্রদান করেছেন, যা জগাই মাধাইয়ের মতো মহাপাপীদের হৃদয় কৃষ্ণভাবনার জাগরণ ঘটাতে সক্ষম। ৫০০ বছর আগে মহাপ্রভু সময়ে এই জগাই ও মাধাই ছিল বর্বর দস্যু। তারা কতই না পাপী ছিল। কিন্তু মহাপ্রভু তাদের সহজে উদ্ধার করে দিলেন। প্রকৃতপক্ষে নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপায়ই তাদের শোধি বক ব্যসে মহাপ্রভু বিভিন্ন ভাবে তাঁর ঐশ্বর্য্যগর্ভ লীলা প্রদর্শন করেছেন। তিনি নবদ্বীপের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন। বস্তুত আমাদের বোঝা উচিত, আমাদের মতো ভগবানও এখানে আসতে পারেন। কিন্তু পার্থক্যটা শুধু জীবনের উদ্দেশ্য ভুলে যায় তখন ভগবান বিশেষ ভক্ত ঈশ্বরের পুত্র, নবী, আচার্য্য বা গুরুদেব এমনকি স্বয়ং অবতীর্ণ হয়ে ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। উদাহরণস্বরূপ, ভগবান বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষ্ণের আংশিক প্রকাশ। যিশুও কৃষ্ণের শক্ত্যাবেশ অবতার।
কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন স্বয়ং কৃষ্ণ-যিনি ভক্তরূপে অবতীর্ণ হয়ে ভগবদ্ভক্তি অনুশীলনের পন্হা শিক্ষা দিচ্ছেন। মাত্র ৫০০০ বছর আগে কৃষ্ণ স্বয়ং এসে অর্জুনকে ভগবদগীতা উপদেশ করেছিলেন- অহং সর্বস্য প্রভবো (আমিই জড় ও চেতন জগতের উৎস) এবং মত্ত পরতর: নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনজ্ঞয়(তোমার থেকে পরতর তত্ত্ব আরনেই)। অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শন করে শ্রীকৃষ্ণকে প্রণতি নিবেদনপূ্র্বক বললেন, ‘আপনিই সর্বাশ্রয়, অবিজ্ঞাত ও পরমেশ্বর ভগবান’।
শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় ‘স্বরাট’ যিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রত্যেকে নিজেকেস্বাধীন ভাবে। তবুও তারা সবকিছু করার স্বাধীনতা চায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তারা সেটি পায়না। আমরা জড়া প্রকৃতির কঠিন নিগড়ে আবদ্ধ হয়ে সুখ দুঃখ অনুভব করছি। আমরা স্বাধীন নই। কিন্তু কৃষ্ণ স্বাধীন হয়েই অবতীর্ণ হন। তাঁকে কর্মফল ভোগ করতে হয় না।
প্রতিটি কর্মের পাঁচটি কারণ থাকে-কর্তা, কর্ম, স্থান, কাল ও দৈব। কর্মটি ভগবৎ পরতন্ত্র। যদি কেই কোনজন্মে সফল হয়, তবে বুঝতে হবে তিনি আগের কোন জন্মে প্রভূত পুণ্য করেছেন। তাই সে তার কিছু কর্মফল ভোগ করেথাকে। অন্য কেউ হয়ত আরো কম উপভোগ করতে পারে। এগুলো কারোর নিয়ন্ত্রণে নেই।
এমনকি যদিও আমরা স্বাধীন হতে চাই, তবুও আমরা সজ্ঞানেবা অজ্ঞানে অনেক কঠিন আইনেরদ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদি আমরা আইনগুলো জানি, আমরা কিরূপে নিয়ন্ত্রিত সেটা জানি, আমাদের স্থিতিটাকে জানি, তবে আমরাই আমাদের চলার সঠিক পন্হা নির্ধারণ করতে পারব। অজ্ঞতার অন্ধকারে থাকার চেয়ে অন্তত:নিজের স্থিতিটুকু জানা অনেক ভাল।
তাই কৃষ্ণভাবনামৃতের ­ অর্থসেই জ্ঞান বিতরণ করা, যাতে করে লোকেরা ভাবে পরিস্থিতি বুঝতে পারে আর এ জন্মেই সেইসৌভাগ্যের সূচনা করতে পারে। এটা লাভ করার জন্যই, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু দিব্যজীবন যাপনের সহজতম পন্থার পরিচিতি দিয়েছেন- কীর্তন, নৃ্ত্য ও প্রসাদ।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রচ্ছন্ন অবতার- তিনি নিজের ভগবত্তা লুক্কায়িত করে আবির্ভূত হয়েছেন। এই কলহ ও কপটতার কলিযুগে ভগবানতাঁর স্বয়ংরূপে আসেন না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ংকৃষ্ণই। কিন্তু তিনি ভক্তভাবে অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা মায়ার আবরণে আচ্ছাদিত থাকার ফলে সেটা বুঝতে পারছিনা। অনেক সময় অধ্যাপক অভিনয়বা উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করেন। শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় অনেক কিছু বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে ভগবদগীতায় ৬০০’র বেশি ভাষ্য রয়েছে। তবে আমরাকোনটা রেখে কোনটাকে গ্রহণ করব; আজ থেকে ৫০০ বছর পূর্বে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সেটা উপলব্ধি করতে পেরে, প্রতারণামূলক ভাষ্যর নিগড় থেকে রক্ষা করার জন্য, নিজে অবতীর্ণ হয়ে সেটা শিক্ষা প্রদান করেছেন।
কেউ যদি কোন রেডিও সেটা ক্রয় করেন, তবে সেটা হয়ত নিজে নাও চালাতে পারেন। কিন্তু রেডিও উৎপাদনকারী একটা ছোট অপারেশনাল ম্যানুয়েল বই ( পরিচালন পদ্ধতি) সাথে দিয়েছেন, যাতেসবকিছু বর্ণিত থাকে। সেটা পড়ে নিজেকে খুব বোকা মনে হতে পারে, কেননা বইতে কত সহজ পন্থা দেওয়া আছে। তেমনিশ্রীমদ্ভগবতগীতা ­ ও শ্রীমদ্ভাগতেও সব কিছু বর্ণিত আছে। মহাপ্রভু বলেছেন, আমি নতুন কিছু দিতেআসিনি। আমি শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষাই প্রদান করেছি। স্বয়ং কৃষ্ণই নিজের ভক্তিযোগ শিক্ষা প্রদান করেছেন। প্রথম দিকে নবদ্বীপে, পরবর্তীতে জগন্নাথপুরীতে তারপর মুম্বাই পর্যন্ত সমস্ত দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ করে হরিনাম সংকীর্তন প্রচার করেছেন। এখন সুদূর কেরালাতেও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পাদপীঠ রয়েছে। সেখানে লোকেরা হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করে। ভারতের সেসব স্থানে তিনি পদার্পণ করেছেন। সেসব স্থানে পাদপীঠ স্থাপিত হয়েছে।
ইসকন প্রতিষ্ঠাতা-আচা ­র্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূ ­র্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ সারা পৃথিবীতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণীপ্রচার করেছেন, যা সংকীর্তনআন্দোলনরূপে বৃহৎ পরিসর লাভ করেছে।
ISKCON....Jagonnath Bace, Rangpur

Monday, March 6, 2017

লাভ জিহাদ ঠেকানোর বা বন্ধ করার কৌশল

লাভ জিহাদ ঠেকানোর বা বন্ধ করার কৌশল জানতে চাইলে পড়ুন নিচের এই পোস্ট টি-
Image may contain: 1 person, textধ্বংসের হাত থেকে হিন্দু সমাজকে বাঁচাতে হলে লাভজিহাদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে :
মুসলমানদের লাভ জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হলো- হিন্দু সমাজের মেয়েগুলোকে দখল করে হিন্দুদেরকে মানসিক কষ্ট দেওয়া, হিন্দু মেয়েকে দখলের মাধ্যে হিন্দু সমাজের জনসংখ্যা কমানো এবং সেই মেয়ের গর্ভে মুসলমানের বাচ্চাদের জন্ম দিয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে হিন্দুদেরকে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত করা; আর এই উদ্দেশ্যগুলোকে না বুঝে আমাদে শিক্ষিত নামধারী নির্বোধ হিন্দু মেয়েরা মুসলমানদের প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে শুধু নিজেদের নয়, হিন্দু সমাজেরও সর্বনাশ করে চলেছে
হিন্দুদের কাপুরুষতা, ভীরুতা, দুর্বলতা হিজড়েপনা দেখতে দেখতে হিন্দু সমাজের প্রতি আমার দিন দিন বিরক্ত ধরে যাচ্ছে; কারণ, এরা নিজেদের মেয়েদের রক্ষা করতে পারে না, তাদের শাসন করতে পারে না, তাদেরকে কন্ট্রোল করতে পারে না, এমনকি তারা ভুল করলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারে না ! প্রতি বছর শত শত হিন্দু মেয়েকে মুসলমানরা লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলে দখল করছে, আমরা না পারছি সেই মেয়েদেরকে শাস্তি দিতে, না পারছি সেই লাভ জিহাদীদেরকে শাস্তি দিতে, এই হিন্দু সমাজের ভবিষ্যৎ কী ?
মেয়েরা হচ্ছে প্রতিটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সম্পদ। সেই মেয়েরা যদি সমাজের বাইরে চলে যায় বা যেতে পারে, সেই দোষ সেই মেয়েদের নয়; দোষ, সেই সমাজের পুরুষদের; কারণ, পুরুষরা তাদের শক্তি, রাগ ক্ষমতা দিয়ে মেয়েদেরকে সমাজে রক্ষা করতে পারে নি
একটি হিন্দু মেয়ে মুসলিম সমাজে গিয়ে কিছুই পায় না; কারণ, কোনো মাপকাঠিতেই মুসলিম সমাজ হিন্দু সমাজের চেয়ে উন্নত নয়, তাহলে মুসলিম সমাজে যাওয়ার মতো ভুল যে মেয়ে করতে যাচ্ছে, তা আমরা করতে দেবো কেনো ?
কোনো লাভ জিহাদই হিন্দুদের চোখের আড়ালে হয় না, কারো না কারো চোখে সেটা পড়েই, যার চোখে সেটা পড়ুক, সে যদি নিজ অবস্থান থেকে সেটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে, আমি বিশ্বাস করি, দেশে একটা লাভ জিহাদের কেসও ঘটতে পারে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে, লাভ জিহাদের ঘটনা জানার পর সরাসরি বা ফোনে মেয়ের বাপের সাথে কথা বলে বেশ কয়েকটি লাভ জিহাদের ঘটনাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করেছি, আমরা সবাই যদি এই ভূমিকা নিই, তাহলে দেশে লাভ জিহাদের কোনো ঘটনা ঘটতে পারে ?
অনেক হিন্দু, লাভ জিহাদের ঘটনা নিজের চোখের সামনে দেখেও চুপ করে থাকে, ভাবে এটা নিয়ে কথা বলতে গেলে কী না কী ভাববে, থাক দরকার কী ? এই ধরণের হিন্দুদের বলছি, আরে বলদ, তুই যদি অন্যের সর্বনাশ দেখে চুপ কর থাকিস, তাহলে তোর মেয়ে যখন মুসলমানের বিছানায় যাওয়ার জন্য রেডি হতে থাকবে, তখন অন্য হিন্দু কি তোকে সেই তথ্য জানাবে ?
আর আপনি কেনো ভাবছেন যে, কাউকে যদি তার মেয়ের বিপথগামীতার কথা জানান, সে আপনার উপর মাইন্ড করবে ? অনেকে এই রকম মনে করে, কিন্তু আমি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যখন সেই মেয়ের বাপকে কথাটা বলেছি, তখন সে খুশি হয়েছে, এটা মনে করে যে, আমি তার একটা বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করেছি। এটা তো যেকোনো মানুষ বুঝবে যে, তার মেয়ে সম্পর্কে তাকে এই তথ্য দিয়ে আমি তার উপকারই করেছি, এতে তার কিছু মাইন্ড করার কথা আসবে কেনো ? তবে এসব ক্ষেত্রে কিছু কৌশল নিতে হবে, কথাটা তাকে বলতে হবে একদম গোপনে, যেন দ্বিতীয় কেউ না শোনে, তাহলেই সে আর মাইন্ড করবে না এবং আপনার এই উপকারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে; কিন্তু যদি আপনি এই নিয় হইচই করে সবাইকে জানিয়ে তার মেয়ের নামে দুর্নাম রটানোর চেষ্টা করেন, সে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেবে না, তখনই আপনার সাথে তার সম্পর্কের অবনতি হতে পারে, তাই এই বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা আপনি যদি কারো উপকারের জন্য কোনো কথা তাকে বলেন, সে আপনার উপর মাইন্ড করতে যাবে কেনো ? পাগলও তো নিজের ভালো বুঝে
লাভ জিহাদের ঘটনাগুলো ঘটে যতটা সম্ভব গোপনে এবং যখন সেটা প্রকাশ্যে আসে তখন সিরিয়াস রূপ নিয়ে আসে, এই সময় মেয়ে যদি কন্ট্রোলে না থাকে, তাহলে এই ঘটনাকে রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে; এসব ক্ষেত্রে, পাকিস্তান আফগানদের রীতি, “যে সমাজ থেকে সরে গেছে, সে মরে গেছেনীতি আমাদেরকে অবলম্বন করতে হবে। একটা কাগজেআমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়লিখে নিয়ে ফোন নেট বিচ্ছিন্ন করে তাকে একটা ঘরে বন্দী করে রাখতে হবে, এতে থেকে মাসের মধ্যে হয় সে লাভ জিহাদের ভাইরাস থেকে মুক্ত হবে বা নিজের মরে গিয়ে সমাজকে বাঁচিয়ে দিয়ে যাবেআমাদের মনে রাখতে হবেএকটি মেয়ে মরে গেলে সমাজের যে ক্ষতিতার চেয়ে শতগুন বেশি ক্ষতি একটি মেয়ে সমাজ থেকে বেরিয়ে মুসলিম সমাজে চলে গেলে। আর যদি কোনোভাবে কোনো হিন্দু মেয়ে সমাজ থেকে বের হয়েই যায়আর মুসলিম সমাজের সাথে ফাইট করে তাকে ফিরিয়ে না আনা যায়তাহলে যে কোনো প্রকারেই হোকঅল্প কিছু রিস্ক নিয়ে হোক বা টাকা পয়সা খরচ করে হোকসেই লাভজিহাদীর পেনিস কেটে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবেএটা করতে পারলেসেই মেয়ে আর কিছুতেই মুসলিম সমাজে টিকতে পারবে নাতাকে হিন্দু সমাজে ফিরতেই হবে। কারণযে মেয়ের কারণে কোনো ছেলে তার লিঙ্গ হারাবেসেই মেয়েকে সে আর কিছুতেই সহ্য করতে পারবে নাআর সহ্য করবেই বা কেনো ? সেই ছেলের পরিবারও তাকে সহ্য করতে পারবে নাএতে হয় মেয়েটি আত্মহত্যা করবে বা হিন্দু সমাজে ফিরে আসবে এবং এর মাধ্যমে সবচেয়ে বড় যে লাভ হবেসেটা হলোহিন্দু মেয়েদেরকে দখল করে তাদের গর্ভে মুসলমানের বাচ্চার জন্ম দেওয়ার খায়েশ মুসলমানদের বন্ধ হবে। আর বছরে এমন দুই চারটা ঘটনা ঘটাতে পারলে মুসলমানরা ভয়ে লাভ জিহাদের মাধ্যমে হিন্দু মেয়েদেরকে দখল করার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করবেকারণএকজন পুরুষ কোনো কিছুর বিনিময়েই তার লিঙ্গ হারাতে চায় না
এই ঘটনা ঘটানোর একটা বড় সুবিধা হলোধরা পড়লেও খুন করার মতো অভিযোগে ১৪ বছরের জেল বা ফাঁসির মতো সাজা হবে নাহলেও অঙ্গহানির অভিযোগ / বছরের জেল হবেএইটুকু রিস্ক নিয়ে তো অন্তত এই শান্তি পাওয়া যাবে যেহিন্দু সমাজের জন্য কিছু হলেও বলিদান দিয়েছিআর এই অপমান  অসম্মানের জীবনকে মেনে নিই নি। আরও একটা কথা আমাদের স্মরণ রাখা দরকার যেআপনার হয়ে কেউ প্রতিশোধ নেবে নাআপনার প্রতিশোধ নিতে হবে আপনাকেইসেটা নিজ উদ্যোগেই হোক বা টাকা খরচ করেই হোক
জয় হিন্দ