Saturday, March 11, 2017

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু –করুণার অবতার

গৌর পূর্ণিমা উপলক্ষে মহাপ্রভুর লীলার বিশেষ পোষ্ট

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিশেষত কলির দুঃখ-দুর্দশাগ্র



শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু –করুণার অবতার
­স্ত জীবদের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত সংকীর্তন আন্দোলন এখনও বিশাল নদীর মতো সারা বিশ্ব প্লাবিত করছে। আর আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON)মহাপ্রভু সেই করুণামৃত বন্যার জল সারা পৃ্থিবীতে বহন করেছে। বিভিন্ন যুগে আত্মাতত্ত্ব ঊপলব্ধির জন্যকতই না কঠোর তপশ্চর্যা ও ব্রতোপবাসাদির বিধান ছিল। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এমন সরল পন্থা প্রদান করেছেন, যা জগাই মাধাইয়ের মতো মহাপাপীদের হৃদয় কৃষ্ণভাবনার জাগরণ ঘটাতে সক্ষম। ৫০০ বছর আগে মহাপ্রভু সময়ে এই জগাই ও মাধাই ছিল বর্বর দস্যু। তারা কতই না পাপী ছিল। কিন্তু মহাপ্রভু তাদের সহজে উদ্ধার করে দিলেন। প্রকৃতপক্ষে নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপায়ই তাদের শোধি বক ব্যসে মহাপ্রভু বিভিন্ন ভাবে তাঁর ঐশ্বর্য্যগর্ভ লীলা প্রদর্শন করেছেন। তিনি নবদ্বীপের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন। বস্তুত আমাদের বোঝা উচিত, আমাদের মতো ভগবানও এখানে আসতে পারেন। কিন্তু পার্থক্যটা শুধু জীবনের উদ্দেশ্য ভুলে যায় তখন ভগবান বিশেষ ভক্ত ঈশ্বরের পুত্র, নবী, আচার্য্য বা গুরুদেব এমনকি স্বয়ং অবতীর্ণ হয়ে ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। উদাহরণস্বরূপ, ভগবান বুদ্ধ হচ্ছেন কৃষ্ণের আংশিক প্রকাশ। যিশুও কৃষ্ণের শক্ত্যাবেশ অবতার।
কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন স্বয়ং কৃষ্ণ-যিনি ভক্তরূপে অবতীর্ণ হয়ে ভগবদ্ভক্তি অনুশীলনের পন্হা শিক্ষা দিচ্ছেন। মাত্র ৫০০০ বছর আগে কৃষ্ণ স্বয়ং এসে অর্জুনকে ভগবদগীতা উপদেশ করেছিলেন- অহং সর্বস্য প্রভবো (আমিই জড় ও চেতন জগতের উৎস) এবং মত্ত পরতর: নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনজ্ঞয়(তোমার থেকে পরতর তত্ত্ব আরনেই)। অর্জুন বিশ্বরূপ দর্শন করে শ্রীকৃষ্ণকে প্রণতি নিবেদনপূ্র্বক বললেন, ‘আপনিই সর্বাশ্রয়, অবিজ্ঞাত ও পরমেশ্বর ভগবান’।
শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় ‘স্বরাট’ যিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রত্যেকে নিজেকেস্বাধীন ভাবে। তবুও তারা সবকিছু করার স্বাধীনতা চায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তারা সেটি পায়না। আমরা জড়া প্রকৃতির কঠিন নিগড়ে আবদ্ধ হয়ে সুখ দুঃখ অনুভব করছি। আমরা স্বাধীন নই। কিন্তু কৃষ্ণ স্বাধীন হয়েই অবতীর্ণ হন। তাঁকে কর্মফল ভোগ করতে হয় না।
প্রতিটি কর্মের পাঁচটি কারণ থাকে-কর্তা, কর্ম, স্থান, কাল ও দৈব। কর্মটি ভগবৎ পরতন্ত্র। যদি কেই কোনজন্মে সফল হয়, তবে বুঝতে হবে তিনি আগের কোন জন্মে প্রভূত পুণ্য করেছেন। তাই সে তার কিছু কর্মফল ভোগ করেথাকে। অন্য কেউ হয়ত আরো কম উপভোগ করতে পারে। এগুলো কারোর নিয়ন্ত্রণে নেই।
এমনকি যদিও আমরা স্বাধীন হতে চাই, তবুও আমরা সজ্ঞানেবা অজ্ঞানে অনেক কঠিন আইনেরদ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদি আমরা আইনগুলো জানি, আমরা কিরূপে নিয়ন্ত্রিত সেটা জানি, আমাদের স্থিতিটাকে জানি, তবে আমরাই আমাদের চলার সঠিক পন্হা নির্ধারণ করতে পারব। অজ্ঞতার অন্ধকারে থাকার চেয়ে অন্তত:নিজের স্থিতিটুকু জানা অনেক ভাল।
তাই কৃষ্ণভাবনামৃতের ­ অর্থসেই জ্ঞান বিতরণ করা, যাতে করে লোকেরা ভাবে পরিস্থিতি বুঝতে পারে আর এ জন্মেই সেইসৌভাগ্যের সূচনা করতে পারে। এটা লাভ করার জন্যই, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু দিব্যজীবন যাপনের সহজতম পন্থার পরিচিতি দিয়েছেন- কীর্তন, নৃ্ত্য ও প্রসাদ।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রচ্ছন্ন অবতার- তিনি নিজের ভগবত্তা লুক্কায়িত করে আবির্ভূত হয়েছেন। এই কলহ ও কপটতার কলিযুগে ভগবানতাঁর স্বয়ংরূপে আসেন না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ংকৃষ্ণই। কিন্তু তিনি ভক্তভাবে অবতীর্ণ হয়েছেন। আমরা মায়ার আবরণে আচ্ছাদিত থাকার ফলে সেটা বুঝতে পারছিনা। অনেক সময় অধ্যাপক অভিনয়বা উদাহরণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করেন। শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় অনেক কিছু বলেছেন। কিন্তু বর্তমানে ভগবদগীতায় ৬০০’র বেশি ভাষ্য রয়েছে। তবে আমরাকোনটা রেখে কোনটাকে গ্রহণ করব; আজ থেকে ৫০০ বছর পূর্বে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সেটা উপলব্ধি করতে পেরে, প্রতারণামূলক ভাষ্যর নিগড় থেকে রক্ষা করার জন্য, নিজে অবতীর্ণ হয়ে সেটা শিক্ষা প্রদান করেছেন।
কেউ যদি কোন রেডিও সেটা ক্রয় করেন, তবে সেটা হয়ত নিজে নাও চালাতে পারেন। কিন্তু রেডিও উৎপাদনকারী একটা ছোট অপারেশনাল ম্যানুয়েল বই ( পরিচালন পদ্ধতি) সাথে দিয়েছেন, যাতেসবকিছু বর্ণিত থাকে। সেটা পড়ে নিজেকে খুব বোকা মনে হতে পারে, কেননা বইতে কত সহজ পন্থা দেওয়া আছে। তেমনিশ্রীমদ্ভগবতগীতা ­ ও শ্রীমদ্ভাগতেও সব কিছু বর্ণিত আছে। মহাপ্রভু বলেছেন, আমি নতুন কিছু দিতেআসিনি। আমি শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষাই প্রদান করেছি। স্বয়ং কৃষ্ণই নিজের ভক্তিযোগ শিক্ষা প্রদান করেছেন। প্রথম দিকে নবদ্বীপে, পরবর্তীতে জগন্নাথপুরীতে তারপর মুম্বাই পর্যন্ত সমস্ত দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ করে হরিনাম সংকীর্তন প্রচার করেছেন। এখন সুদূর কেরালাতেও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পাদপীঠ রয়েছে। সেখানে লোকেরা হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করে। ভারতের সেসব স্থানে তিনি পদার্পণ করেছেন। সেসব স্থানে পাদপীঠ স্থাপিত হয়েছে।
ইসকন প্রতিষ্ঠাতা-আচা ­র্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূ ­র্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ সারা পৃথিবীতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণীপ্রচার করেছেন, যা সংকীর্তনআন্দোলনরূপে বৃহৎ পরিসর লাভ করেছে।
ISKCON....Jagonnath Bace, Rangpur

0 comments:

Post a Comment